বইঃ- তাফসীর তাবারী,লেখকঃ-আবু জাফর ইবন জারীর তাবারী (র)























তাফসীর গ্রন্থ হলো মূলত মহান আল্লাহর তরফ
হতে রাসূল (সা)-এর উপর নাযিলকৃত আল-কুরআনের আল-হাদীসের মাধ্যমে
ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ। সাধারণ মানুষের জন্য আল-কুরআনের অন্তর্নিহিত ভাব ও মর্ম
সহজবোধ্য হয়ে উঠে তাফসীর পাঠ করার মাধ্যমে। এজন্য ইসলামের প্রথম থেকে
কুরআন ও হাদীসের বিশেষজ্ঞ ‘আলিমগণ সাধারণ মানুষের জন্য সহজসাধ্য করে রচনা
করেছেন তাফসীর গ্রন্থ।
এসব তাফসীর গ্রন্থের মধ্যে পবিত্র কুরআনের
প্রখ্যাত ভাষ্যকার আল্লামা আবূ জা’ফর মুহাম্মদ ইবন জারীর তাবারী (র)
প্রণীত তাফসীরে তাবারী অন্যতম। এই তাফসীরখানা তাফসীরে তাবারী নাম সমধিক
পরিচিত হলেও এর প্রকৃত নাম “জামিউল বায়ান ফী তাফসীরিল কুরআন”।
পবিত্র কুরআনের সঠিক ব্যাখ্যায় এই তাফসীরে সর্বাধিক হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
এটি মূলত হাদীস ভিত্তিক তাফসীর। এজন্য এ গ্রন্থখানি মুসলিম জাহানে
বিশেষভাবে সমাদৃত।
তত্ত্ব ও তথ্যের বিশুদ্ধতার জন্য
পাশ্চাত্য জগতের পন্ডিত-গবেষকগণও এ তাফসীরখানার প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট
হয়েছেন। ১৯৮৮ সালে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস তাফসীরটির প্রথম খন্ডের
ইংরেজী অনুবাদ প্রকাশ করেছে। আল্লাহ তাআলার অপার অনুগ্রহে ইসলামিক
ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এটি হাদীস ভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ তাফসীর। হাদীসের সনদ ভিত্তিক তাফসীর এর জন্য তাঁকে সনদভিত্তিক তাফসীর রচনার পথিকৃত বলা হয়।
প্রতিটি আয়াতের আলাদা আলাদা তাফসীর।
- কুরআন দিয়ে কুরআনের তাফসীর করা হয়েছে।
- আল্লামা ইবনে জারীর তাবারী (রহ) প্রথমে আয়াতটির সারাংশ তাফসীর করেছেন। পরবর্তিতে এ সম্পর্কিত হাদীসগুলো দিয়ে তা উল্লেখ করেছেন।
- প্রতিটি আয়াতের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সা), সাহাবী ও তাবিঈগণের বর্ণিত হাদীস সনদ সহকারে বর্ণনা করেছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি মারফূ হাদীসকেই প্রমাণ্য ও নির্ভরযোগ্য মনে করছেন।
- কোন আয়াতের তাফসীরে কয়েকটি মত থাকলে তাও উল্লেখ করা হয়েছে।
- আহকাম সম্পর্কিত আয়াতের তাফসীরের ক্ষেত্রে তিনি ফিকহী মাসআলা সম্পর্কেও আলোকপাত করেছেন।
- বিভিন্ন দূরহ বা কঠিন শব্দের অর্থ বিভিন্ন বিদ্বানগণের নিকট কি অর্থ প্রকাশ পেয়েছে তাও উল্লেখ করা হয়েছে।
- এই তাফসীরে ই’জাযুল কুরআন সন্নিবেশিত করা হয়েছে। অর্থ্যাৎ যেসব আয়াতে কুরআনের অলৌকিকত্ব সম্পর্কে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে, আল্লামা তাবারী সেসব চ্যালেঞ্জের মুকাবিলায় যৌক্তিক প্রমাণ ও অভিনব বর্ণনা পদ্ধতি উপস্থাপন করেছেন।
- এই তাফসীরের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, মু’তাযিলা, কাদরিয়া ও জাহমিয়া তথা বাতিল ফিরকার মতামত উল্লেখ করত: তা খন্ডনের মাধ্যমে দাতভাঙ্গা জবাব দিয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের অভিমতকে প্রতিষ্ঠা করেছেন।
- অপ্রয়োজনীয় বর্ণনা, অতিরিক্ত আলোচনা, মুফাসসিরদের নিজস্ব চিন্তা-চেতানা তথা ব্যক্তিগত মত পরিহার করেছেন।
- কুরআনের বিভিন্ন শব্দের পঠন-পদ্ধতির বিশ্লেষণও তাফসীরে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি ‘কিতাবুল কিরাত’ নামে ১৮ খন্ডে সমাপ্ত একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন।
- অনেক ক্ষেত্রে আয়াতের ব্যাখ্যায় আরবী কবিতাও উল্লেখ করেছেন।
এ তাফসীর সম্পর্কে ইমাম নববী (র) বলেন,
‘আত-তাবারীর তাফসীর গ্রন্থটি এক অনন্য বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জল। এই তাফসীরটি তাঁর অনন্য কীর্তি। এর সমতুল তাফসীর আজ পর্যন্ত কেউ রচনা করতে পারেনি।’
ইমাম ইবন তাইমিয়াহ বলেন,
‘আত-তাবারীর তাফসীর গ্রন্থখানি বিশেষ মর্যাদার অধিকারী, সত্যিই এটি একটি অতুলীয় তাফসীর গ্রন্থ।”
৯ম খন্ডের আলোচ্য বিষয়:
- সূরা মায়িদার ৪৪নং আয়াত হতে ১২০ নং আয়াত
- সূরা আন’আম এর ১হতে ৮৫নং আয়াত


No comments
Post a Comment