clock

আক্বীদা ওয়াসেতিয়া’

আসসালামুআলাইকুম আক্বীদাহ ওয়াসেত্বিয়া | মূলঃ শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) | 
                                      অনুবাদঃ শাইখ মতিউর রহমান মাদানী
🌹 আল-আক্বীদাতুল ওয়াসিত্বীয়া 🌹 যাবতীয় প্রশংসা নিখিল জাহানের প্রতিপালক মহান রাব্বুল আলা'মিনের জন্য। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি। আল্লাহ্‌ আজ্জা ওয়াজাল্লা শানূহু সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জনের উপর ভিত্তি করে ইহকালীণ এবং পরকালীণ কল্যাণ নির্ভর করে। আবদ্ (বান্দা) যতক্ষণ না মহান রাব্বুল ইজ্জত সম্পর্কে তাঁর প্রভুত্ব, উলূহীয়াত, তাঁর অতি সুন্দর নামসমূহ এবং তাঁর অতি সুউচ্চ গুণাবলী সম্পর্কে জ্ঞাণ অর্জন না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত সে প্রর্কৃত কল্যাণ হতে বঞ্চিত থাকবে। দ্বীন ইসলামে নির্ভেজাল ও পরিশুদ্ধ আক্বীদার গুরুত্ব অপরিসীম। আর সেদিকটি লক্ষ্য করেই আজকে আক্বীদার একটি কিতাব সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আকারে ধারণা দেওয়া চেষ্ঠা করব ইনশাআল্লাহ। মানুষের মনে স্রষ্টার অস্তিত্ব, তাঁর পবিত্র সত্তা ও গুণাবলী, তাঁর সৃষ্টি ও কর্মসমূহ, সৃষ্টির সূচনা, তার পরিসমাপ্তি, সৃষ্টিজগতের সকল সৃষ্টি, তাদের মধ্যেকার পারস্পারিক সম্পর্ক তাকদীর এবং মৃত্যুর পরবর্তী জীবন ও তাতে সংঘটিতব্য বিষয়াদি সম্পর্কে যেসব সন্দেহ ও প্রশ্ন জাগ্রত হয়, স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন ইসলামি আক্বীদাই কেবলই সেসকল প্রশ্ন ও সন্দেহের জবাব দিতে সক্ষম। পাশাপাশি ইসলামের মাঝে যেসকল বাতিলপন্থী ফিরক্বা বের হয়েছে তাদের জবাব দানেও সঠিক আক্বীদা শিক্ষাগ্রহণ করার প্রয়োজনীতা অতিগুরুত্ব বহন করে। এরই ধারাবাহিকতায় ইসলাম সম্পর্কে যাবতীয় সংশয় দূরীকরণার্থে ক্ষণজন্মা এক মনিষী কলম ধরেছিলেন। যা সংক্ষিপ্ত একটি কিতাব অথচ ইসলামি আক্বীদাহ সম্পর্কে গভীর জ্ঞাণার্জনে অতুলনীয়। ★ কিতাবের নাম- আল-আক্বীদাতুল ওয়াসিত্বীয়া। ★ লেখক- শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ্। ★ আল-আক্বীদাতুল ওয়াসিত্বীয়া নামক কিতাব লিখার ইতিহাস: ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ্ রাহিমাহুল্লাহ্ নিজেই বর্ণনা করেছেন এইভাবে, "তাতারী শাসনাধীন ইসলামি সাম্রাজ্যের মুসলিমদের মাঝে যখন অজ্ঞতা ও ঝুলুম ছড়িয়ে পড়ল, দ্বীনের মৌলিক শিক্ষা যখন প্রায় বিলুপ্ত হওয়ার উপক্রম হলো, চতুর্দিকে কুসংস্কার ছড়িয়ে পড়ল এবং সঠিক ইসলামি আক্বীদা মুসলিমগণ ভুলেই যাচ্ছিল, তখন ইরাকের দক্ষিণাঞ্চল বসরা ও কূফার মধ্যকার 'ওয়াসেত' শহরের জনৈক কাযী শাইখের নিকট উপস্থিত হয়ে ইসলামি আক্বীদার বিষয়গুলো একসাথে উল্লেখ করে একটি কিতাব লিখার অনুরোধ করেন। শাইখ জবাবে বলেন, আক্বীদার বিষয়ে লোকেরা তো অনেক কিতাবই রচনা করেছে। কিন্তু কাযী সাহেব একপ্রকার জোড়াজোড়ি করেই বললেন যে, আমি কেবল আপনার পক্ষ হতেই এ বিষয়ে একটি পুস্তক কামনা করছি। তখন শাইখুল ইসলাম ৬৯৮ হিজরীর কোন এক দিনে আসরের সালাতের পর এক বৈঠকে উক্ত মূল্যবান কিতাবদি লিখে শেষ করেছেন। ফালিল্লাহিল হামদ্। আল্লাহ্‌ আজ্জা ওয়াজাল্লা শাইখুল ইসলামকে তার উপযুক্ত উত্তম প্রতিদান দান করুন, আমীন। ★ নামকরণ: ওয়াসেতের কাযীর অনুরোধে এবং ততকালীণ ওয়াসেতের অধিবাসীদের জন্য যেহেতু কিতাবটি লিখা হয়েছে, তাই এটিকে আল-আক্বীদাতুল ওয়াসিত্বীয়া বলা হয়। সেই সাথে واسط অর্থ যেহেতু মধ্যবর্তী এবং এই কিতাবে যেহেতু মধ্যম্পন্থী উম্মাতের তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'তের আক্বীদাগুলো সন্নিবেশিত হয়েছে, তাই কিতাবটির নাম 'আল আক্বীদাতুল ওয়াসিত্বীয়া' হওয়া যথার্থ হয়েছে। ★ 'আল আক্বীদাতুল ওয়াসিত্বীয়া'-র ব্যাখ্যাগ্রন্থ: ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহর উক্ত গ্রন্থটির বেশ'কটি শরাহ (ব্যাখ্যা) গ্রন্থ লিখা হয়েছে। যথা: ১) আর রওদ্বাতুন নাদিয়াহ শারহু আক্বীদাতিল ওয়াসিত্বীয়া- শাইখ যাইদ বিন আব্দুল আযিয বিন ফাইয়াস। ২) আত-তাম্বিহাতু সুন্নিইয়াতু আলাল আক্বীদাতিল ওয়াসিত্বীয়া- শাইখ আব্দুর আযিয বিন নাসির রশিদ। ৩) আত-তাম্বিহাতুল লাত্বিফা ফি মা ইহতাওয়াত আলাইহিল ওয়াসিত্বীয়া মিন মাবাহিলিস মানিফা- শাইখ আব্দুর রহমান বিন নাসীর সাদী। ৪) নুক্বিলাত মিন ফাওয়াইদি আলক্বাতিহা আলা নুসখাতি ওয়াক্বতিত্বলাব। ৫) উপরের শরাহু গ্রন্থগুলো হতে সংকলন করে সংক্ষিপ্ত আকারে আরেকটি শরাহ লিখা হয়েছে, যার নাম "শারহুল আক্বীদা আল ওয়াসিত্বীয়া। লেখক- ড. সালিহ বিন ফাওযান আল ফাওযান হাফিজাহুল্লাহ্। ★ গ্রন্থটিতে যা রয়েছে: তিন প্রকার তাওহীদের মধ্য থেকে শুধু তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত, তাক্বদীর, ঈমানের বিভিন্ন মাস'আলা, আখিরাত সম্পর্কিত গায়েবি বিষয়সমূহ, খিলাফাত ও সাহাবীদের ফজিলত এবং তদসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোই ওয়াসিত্বীয়াই স্থান পেয়েছে। সুতরাং এটা স্পষ্ট যে, এ হিসেবে উক্ত গ্রন্থটি আক্বীদার পূর্ণাংগ কিতাব নয়। বিশেষ করে তাওহীদুল উলূহিয়্যাহর বিষয়াটি উক্ত গ্রন্থে আলোচিত হয়নি। তাই এই গ্রন্থটির পাশাপাশি "শারহুল আক্বীদা আত-ত্বহাবী" এবং "নাজাতপ্রাপ্ত দলের আক্বীদা" নামক বই দুটি অধ্যয়ন করার অনুরোধ জ্ঞাপন করছি। ★ অনুবাদ: বাংলা ভাষাভাষী মুসলিমদের জন্য "আল-আক্বীদাতুল ওয়াসিত্বীয়া" গ্রন্থটির ব্যাখ্যাগ্রন্থ "শারহুল আক্বীদা আল ওয়াসিত্বীয়া" গ্রন্থটি অনুবাদ করেছেন শাইখ আব্দুল্লাহ শাহেদ আল-মাদানী Abdullah Shahed Al-madani। জমঈয়তে আহলে হাদীছ বাংলাদেশ সৌদী'আরব শাখার তত্ত্বাবধানে শাইখ উক্ত গ্রন্থটি অনুবাদ করেন। আল্লাহ্‌ শাইখকে তার উপযুক্ত প্রতিদান দান করুন, আমীন। ★ প্রকাশ ও প্রকাশনা: "শারহুল আক্বীদা আল ওয়াসিত্বীয়া" (বাংলা অনুবাদ) গ্রন্থটি ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে "মাকতাবাতুস সুন্নাহ" হতে প্রথম প্রকাশ হয়। উল্লেখ্য যে, "মাকতাবাতুস সুন্নাহ"-র কর্ণধার ডাঃ মোশারফ হোসেন ভাই Mosharrof Ibn Moslem একজন দারা'জ দিলের (হৃদয়ের) অধিকারী। বাংলা ভাষায় আক্বীদার কিতাবাদীর অনুবাদ, ছাপা, প্রকাশ ও প্রচারে উনার অবদান অতুলনীয়। আমাদের দেশে দ্বীন শিক্ষা, আক্বীদার সংশোধন ও দাওয়াতি কাজের জন্য বিনামূল্যে বই বিতরন উনার মত আর কেউ করেছে বলে আমার জানা নেই। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু তা'আলা উনাকে জাযায়ে খায়ের দান করুন এবং উনার এসকল বই প্রকাশে তাওফিক্ব দান করুন, আমীন। পরিশেষে, আমরা কত ভাবেই না আমাদের অর্থ অপচয় করি। অথচ দ্বীনি শিক্ষার জন্য বই কিনতে গেলেই পিডিএফ খুঁজি। আমাদের এ মানসিকতার পরিবর্তন জরুরী। আপনার ইলম হাসিলের জন্য আপনার ক্রয়কৃত বই হবে আপনার জন্য সাদাকা। কে জানে? হয়ত কেউ আপনার ক্রয়কৃত বইটি পড়ে তার আক্বীদা সংশোধন করে নেবে! সে হয়ত অন্যকে শিক্ষা দিবে! এভাবেই চলতে থাকলে আপনার নেকীর পাল্লায় আপনার অজান্তেই কত নেকী উঠবে একবার ভেবে দেখেছেন? আজ নতুন করে ভাববার অনুরোধ করছি। আল্লাহ্‌ তা'আলা আমাদের হক্ব বুঝার তাওফিক্ব দান করুন, আমীন। ভাল লাগলে অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করুন।

No comments